বিশ্বজুড়ে গত দু’বছরে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে করোনাভাইরাস। তবে এই সময়ে শিশুদের মধ্যে ভাইরাসটি সংক্রমণের তেমন বেশি দেখা যায়নি। মহামারীর একেবারে শুরুর দিকে প্রবীণরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। ডেল্টা স্ট্রেনে মাঝবয়সিদের বেশি ভুগতে দেখা গেছে। বর্তমানে ওমিক্রন স্ট্রেনে ছোটদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঘটনা বেড়েছে। ওমিক্রনে প্রাণসংশয় হয়তো কম, কিন্তু চিন্তা বাড়াচ্ছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, করোনা থেকে সেরে ওঠার পরে অনেক শিশুরই টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস ধরা পড়ছে। এই সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে আমেরিকার ‘সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (সিডিসি)।

ইউরোপে ইতিমধ্যেই এ রকম একাধিক ঘটনা রিপোর্ট করেছেন চিকিৎসকেরা। তারা জানিয়েছেন, করোনা থেকে সেরে ওঠার পরে টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে শিশুদের। কারও কারও ‘ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস’ দেখা যাচ্ছে। এতে রক্তে উপস্থিত শর্করা থেকে শক্তি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ইনসুলিন যথেষ্ট পরিমাণে তৈরি হয় না। এ অসুখে শিশুর প্রাণসংশয়ও ঘটতে পারে।

সিডিসি জানিয়েছে, মেডিকেল ইনসিয়োরেন্সের নথি পরীক্ষা করে দেখা গেছে আমেরিকাতেও কোভিডের পরে ১৮ বছর বয়সের নীচে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে। সিডিসি’র গবেষক শ্যারন সায়াদ বলেন, “ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেড়ে যাওয়া কিন্তু খুবই বিপজ্জনক।”
রিপোর্টের মূল লেখক সায়াদ জানিয়েছেন, কিছু বিষয় এখনও অস্পষ্ট। যেমন, কোভিডের পরে ধরা পড়া ডায়াবেটিস মারাত্মক আকার নেবে কি না জানা নেই। এ-ও স্পষ্ট নয়, এটি সাময়িক অসুস্থতা নাকি।

যেসব বাচ্চা কোভিড আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের বাবা-মায়ের জন্য সায়াদের পরামর্শ, “ভাল করে সন্তানের উপরে নজর রাখুন। ডায়াবেটিসের কোনও উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের কাছে যান। যাতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়।”

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদেরও বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন সায়াদ।

যে সব শিশু এখনও কোভিড আক্রান্ত হয়নি, তাদের মা-বাবাকে সায়াদের নির্দেশ— ‘‘অবশ্যই সন্তানকে মাস্ক পরান, পরিবারের বাইরে মেলামেশা থেকে আপাতত দূরে রাখুন।’’ আমেরিকায় ৫ বছর বয়স পর্যন্ত টিকাকরণে ছাড়পত্র রয়েছে। ইউরোপেও ছোটদের টিকাকরণ চলছে। কিন্তুর বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে বাচ্চাদের টিকাকরণ এখনও শুরু হয়নি। এই সব দেশে শিশুদের কোভিড থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন সায়াদ। কারণ শুধু ভাইরাসের আক্রমণ নয়, তার পরে থাকছে ডায়াবেটিসের মতো রোগের আশঙ্কাও।

করোনা-বিধি ছাড়াও ছোটদের শরীরচর্চায় যুক্ত করার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। অতিমারিতে গৃহবন্দি দশায় ওজন বাড়ছে। বাচ্চাদের অস্বাভাবিক ওজন-বৃদ্ধিও ডায়াবেটিস ডেকে আনতে পারে।

সূত্র: ফোর্বস